পারিপার্শ্বিকতা এবং আইন
মাকসুদ আলম মিলন লিখেছেন ইত্তেফাকে
|
![]() প্রকৃতি এবং পারিপার্শ্বিকতা আমাদের জীবনপ্রবাহের গতিপ্রকৃতি ঠিক করে দেয়। এই প্রভাবকের মাত্রা অত্যধিক যার বলয় থেকে বেরোনো সহজ ব্যাপার না। এর বলয় থেকে বেরিয়ে আসার শতকরা হার অতি নগণ্য। কিন্তু এই বলয়ে মিলিয়ে যাওয়ার শতকরা হার অধিক এবং সার্বজনীন। প্রকৃতি এবং পারিপার্শ্বিকতা প্রতিনিয়তই প্রতিচ্ছবি রূপে আমাদের অবচেতন মনে দাগ কাটে— যার প্রতিক্রিয়া তাত্ক্ষণিক, হতে পারে মন্থরগতির। একটা শিশু কোন পরিবেশ থেকে বেড়ে উঠছে, তার পারিপার্শ্বিকতা কেমন— এসবের প্রতিফলন ঘটে তার চিন্তাশক্তিতে, তার আচার-আচরণে, তার কথাবার্তায়। শহরের পরিবেশে বেড়ে উঠা ছেলেমেয়েদের চিন্তাশক্তি, আচার-আচরণে, কায়দা করে কথাবার্তা বলার সাথে গ্রামের পরিবেশে বেড়ে উঠা ছেলেমেয়েদের চিন্তাশক্তি, আচার-আচরণ ও কথাবার্তার তফাতটা একটু ভিন্নই বটে। শহরের পরিবেশ, পারিপার্শ্বিকতা এবং গ্রামের পরিবেশ পারিপার্শ্বিকতা ভিন্ন বলেই পার্থক্যটা তৈরি হয়। কথা হচ্ছে, খুন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, হানাহানি, মারামারি, ক্ষমতার অপব্যবহার এগুলো কিন্তু সভ্যতার শুরু থেকেই ছিল। আগে এতো অডিও, ভিডিও, ছবি, গণমাধ্যম ছিল না। ফলে প্রকাশ পেতো কম, উন্মোচন হতো কম। প্রযুক্তি বিপ্লবের ফলে আমরা এখন দেশীয় সংস্কৃতি, সিনেমা, নাটক, চাঞ্চল্যকর ঘটনা থেকে শুরু করে বিদেশি সংস্কৃতি, সিনেমা, নাটক, চাঞ্চল্যকর ঘটনা দেখতে এবং উপভোগ করতে পারছি ঘরে বসে যখন-তখন, হরহামেশাই। আমরা অনেক বেশি মিডিয়াভিত্তিক বাস্তবতায় অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমাদের কাছে আগে যা দূরবর্তী অদেখা ছিল এখন তা নিকটবর্তী। দেখা সহজ করে দিচ্ছে আকাশ প্রযুক্তি। অদেখা, সাংঘাতিক, মর্মান্তিক ঘটনা এখন আমরা আকাশ-প্রযুক্তির মাধ্যমে নিত্যদিন দেখে যাচ্ছি, অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে। বিস্ফোরক, অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটলে এখন তুচ্ছ ব্যাপার মনে হয়। সহজে অবাক হওয়া ব্যাপারটা এ কারণেই হ্রাস পাচ্ছে দিনকে দিন। পারিপার্শ্বিকতা নীরব ঘাতকের ন্যায় আমাদের অবচেতন মনে জায়গা করে নেয়। ধীরে ধীরে আমাদের মনকে উসকে দিতে থাকে এবং প্রতিফলন ঘটাতে থাকে আমাদের চিন্তাজগতে। প্রকাশিত হয় কাজকর্মে, আচার-আচরণে, কথাবার্তায়। খুন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, হানাহানি, মারামারি, ক্ষমতার অপব্যবহার প্রভৃতির পেছনে সামাজিক ব্যবস্থাপনা, রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনা দুটো কারণই বিদ্যমান। এগুলোতে মানুষের আগ্রাসী মনোভাব বেশি দেখা যায়। নিয়ম ভাঙতে মানুষের মনস্তান্তিকভাবে মজা পায়। এগুলো দমিয়ে, সীমার মধ্যে রাখার জন্যই তৈরি করা হয়েছে আইন। আইনের প্রয়োগ যদি কঠোরভাবে দৃষ্টান্তস্বরূপ করা হয় তাহলে মানুষের চাহিদা, জিজ্ঞাসার জায়গায় ধাক্কা লাগে। নিয়ম ভাঙতে মানুষ ভয় পায়। “এই নিয়ম ভাঙার কারণে এ রকম ভয়াবহ শাস্তি” একথা বিবেচনায় নিতে বাধ্য হয় তারা। উচিত-অনুচিতের পার্থক্য খোঁজে, ভালো-মন্দের বিভেদের দেয়াল মজবুত হয়, চাহিদাকে দমিয়ে রাখে, সীমার মধ্যে রাখে, নিয়মের মধ্যে থাকে। আমাদের পারিপার্শ্বিকতা শুরু থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ আর আইনের বেআইনি প্রয়োগের মহড়া চলছে প্রতিনিয়ত। এর ফলে দিনকে দিন খুন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, হানাহানি, মারামারি, ক্ষমতার অপব্যবহারের উত্তপ্ত প্রভাব প্রতিফলিত হচ্ছে সমাজে ও রাষ্ট্রে। কখনোবা নিরুত্তাপে, কখনো বা বিস্ফোরিতভাবে। এগুলো সীমাহীনভাবে ছড়াচ্ছে। এগুলোকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না ঠিকই কিন্তু সীমার মধ্যে, দমিয়ে রেখে, নিয়মের মধ্যে আনা সম্ভব। যার জন্যে প্রয়োজন আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতার উন্নতি। লেখক : শিক্ষার্থী, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ |