চাকরির বাজারে বিত্তহীনদের কান্না
শেখ রাশেদুজ্জামান রাকিব লিখেছেন ইত্তেফাকে
|
![]() অনেক ক্ষেত্রে এ অর্থ প্রদানে প্রতিযোগিতা পর্যন্ত চলে। কে কার চেয়ে বেশি অর্থ প্রদান করতে পারে বা কতটা বেশি ক্ষমতাধর ব্যক্তিকে হাত করতে পারে তার দৌড়ঝাঁপ চলে প্রতিনিয়ত। আর এ ক্ষেত্রে সুবিধাভোগী বা যারা ঘুষের সাথে জড়িত তারা নিলামের মতো দাম হাঁকাবার ব্যবস্থা করে থাকে। এসব ঘটে নিদ্বির্ধায় কোনো ধরনের প্রতিরোধ ছাড়াই। একদিকে জনগণ এই অর্থদাতা যাদের সচেতনতাই এসব অনিয়ম দূরীকরণে সহায়ক হতো; অন্যদিকে জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসন পর্যায় থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমেও এসব দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব হতো। কিন্তু এসব জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসনে শক্ত পর্যায়ে অবস্থানরত ব্যক্তিরাই যে এসব অর্থের সুফলভোগী। ফলে দুইদিক থেকেই চাপা পড়ে যায় আসল রহস্য। এই রহস্য উন্মোচনে কেউ উদ্যোগী হলে চারপাশ থেকে বাধার সম্মুখীন হয় বা অনেক ক্ষেত্রে তাকেই ভোগান্তির শিকার হতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে যে দলীয় আধিপত্য বিদ্যমান তা মাঝে মাঝেই পত্রিকায় চোখে পড়ে। অথচ একটি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বলা হয় এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে। এখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও শিক্ষক দেশের সামগ্রিক পরিকল্পনার রূপকার, ভবিষ্যত্ নীতি-নির্ধারক, দেশনায়ক। এদের নীতিবোধ আকাশচুম্বী হওয়ার কথা ছিল যা সমগ্র দেশের মানুষের জন্য হতে পারতো আদর্শস্বরূপ। অথচ এখানেই এতটা অস্বচ্ছ নীতির চর্চা হয় যা ভাবা যায় না। এজন্য দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এখন আর সুস্থ বিদ্যাচর্চা চলে না। কেননা, যে শিক্ষক ক্ষমতাবলে বা অর্থ ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি আর যাই হোক নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা কখনো দেবেন না। এখনকার ছাত্রদের মাঝে প্রায়ই একটা কথা শোনা যায়, তা হলো রাজনীতির সাথে লেগে থাকো যাতে একটু সুবিধা পাওয়া যায়। মূলত এই সুবিধাটা হচ্ছে চাকরি লাভের সুবিধা। অর্থাত্ রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলে চাকরিতে নিয়োগের সময় সুপারিশ সহজলভ্য হয়। এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজে নিয়োগে বাণিজ্য ও ঘুষ বেশি চলে। এসব ঘুষের লেনদেন যত বড় এর সাথে সংশ্লিষ্ট শিকড়-বাকড়ও অনেক গভীর। এখন কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিয়োগের জন্য ঘুষের প্রক্রিয়ায় অভিনব পদ্ধতির উদ্ভাবন ঘটেছে। যেমন ঘুষদাতা নামমাত্র নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। আর বাকি কাজটুকু অর্থের বিনিময়ে হয়ে যায়। গ্রাম বা শহরতলিতে স্বাস্থ্য, খাদ্য অফিস ও স্কুল-কলেজের দপ্তরি নিয়োগ পুরোপুরি অনিয়মের মাধ্যমে হয়। দেশের প্রতিটি জায়গায় এমন পন্থায় জনবল নিয়োগের ফলে দুর্নীতির মাত্রা চরমে উঠে যায়। কেননা, এই চাকরি লাভে প্রদেয় অর্থ ওঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও জঘন্য কাজে জড়িত হয়ে পড়েন। এখন শিশুকাল থেকেই সবাই এটা শুনতে অভ্যস্ত যে, লেখাপড়া করে কোনো লাভ নেই। কেননা কিছু করতে হলে টাকা এবং মামা অনস্বীকার্য। যার ফলে শিক্ষার্থীদের মানসিকতা সেভাবেই গড়ে ওঠে। এভাবেই প্রতিনিয়ত বেকার যুবসমাজ হতাশার অতল সাগরে ডুবে যায়। কেউ কেউ নিজের জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দেয় এইসব প্রতিকূল পরিবেশের সাথে টিকে থাকতে ব্যর্থ হয়ে। এমন আত্মহত্যার ঘটনা আমাদের অজানা নয়। দুর্নীতির দুষ্টচক্রে পড়ে প্রকৃত মেধাবীরা উপেক্ষিত হয় এবং অনেক যোগ্য প্রার্থীও কর্মে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়। অন্যদিকে মেধাহীন ও অযোগ্য লোক এসব জায়গায় নিয়োগ লাভের কারণে বিবেকবোধ বিসর্জন দিয়ে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অপকর্মের জন্ম দেয়। এমন অবস্থা বিরামহীনভাবে চলতে থাকলে শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ দেশের উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। সরকারের উচিত প্রমাণাদিসহ অন্যায়ভাবে প্রভাব খাটিয়ে ও অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ পাওয়া এসব ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা। কিন্তু এ জন্য জনগণের সাহায্য একান্ত কাম্য। অন্যথায় সরকারের একার পক্ষে এটা নির্মূল করা সম্ভব নয়। চাকরি নামক পণ্য বিক্রির বাণিজ্যে ছেয়ে গেছে এ দেশ। এ বাণিজ্যের অবাধ প্রবাহ রোধ করতে না পারলে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতাধরদের স্বর্গের নীড় হবে এ দেশ। লেখক :শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |