আগ্রাসী সংস্কৃতি ও উদাসীন বাবা-মা
শেখ রাশেদুজ্জামান রাকিব
|
![]()
আমাদের সংস্কৃতিতে অসম পরিবর্তন ঘটছে। বিদেশি চ্যানেল ও পশ্চিমা সংস্কৃতির
অবাধ অনুপ্রবেশের ফলে এ দেশের তরুণ-তরুণীরা আচার-ব্যবহার থেকে শুরু করে
পোশাক-আশাকসহ সবকিছুতেই সেটার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে। যার পরিণতিতে তারা
বাবা-মার অবাধ্য হয়ে উঠছে ক্রমান্বয়ে। কেননা তাদের এই নতুন জীবনধারণের
সঙ্গে তাদের পিতা-মাতার নিয়ন্ত্রণ-ইচ্ছা সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। এসব সংস্কৃতি
ধারণের ফলে তারা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে এবং নারীকে হয়রানি করার মতো কার্যকলাপ
রপ্ত করছে। এসব ঘটছে শুধু পিতা-মাতার উদাসীনতা ও নজরদারির অভাবে। শুধু
সন্তানের ভরণ-পোষণই যে সব নয় বর্তমানে আলোচিত ঐশীর চরিত্র থেকেই সেটা
ভালোভাবে অনুধাবন করা সম্ভব। পিতা উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ায় বিপুল
অর্থ দিয়েছে সন্তানকে। কিন্তু সেসব অর্থ খরচের খাতগুলো কী ছিল সেই
নজরদারিটুকু পর্যন্ত ছিল না। যার ফলে কিশোরী মেয়েটি ভয়ানকভাবে নেশায় আসক্ত
হওয়ার পরও কিছুই জানতে পারেনি পরিবার। কিন্তু সেই মেয়েই জঘন্য চরিত্রের
পরিচয় দিয়েছে স্বীয় পিতা-মাতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে। রেইনট্রি হোটেলে সংঘটিত
ধর্ষণের প্রতিবিম্বও অভিন্ন। এখানে অভিযুক্ত সন্তানের জঘন্য ক্রিয়াকলাপ
নির্দ্বিধায় মেনে নিয়েছে তার পিতা। শুধু তাই নয়, অনেক ক্ষেত্রে প্র্রশ্রয়ও
তাকে আগ্রাসী করে তুলেছে। মেসে বা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়
হোস্টেলে অবস্থানরত অধিকাংশ ছেলে-মেয়ের অতি স্বাধীনতা এবং তাদের পরিবারের
নজরদারির মধ্যে না থাকায় তারা নেশায় আসক্ত হচ্ছে। এর ফল যে নেতিবাচক হতে
পারে এটা অনেকে মাথায়ই রাখেন না। ফলে বিপদ চারদিক ঘিরে থাকে তাদের। যার
দরুন মাদকাসক্তি, খুন, ধর্ষণ ইত্যাদি ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। তাই আমাদের
উচিত পরিণত বয়সে সন্তানের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণের সংঘর্ষ তৈরি না
করে শিশুকাল থেকেই তার আচরণের মধ্যে নৈতিকতার ও শিষ্টাচারের সংমিশ্রণ ঘটানো
যাতে অপ্রত্যাশিত কোনো আচরণ তার মধ্যে না আসে। শুধু অর্থের ছড়াছড়ি নয়,
পারিবারিক সহমর্মিতাই পারে শিশুর সুস্থ মানসিক বিকাশ ঘটিয়ে আদর্শ মানুষ
গড়তে। পারিবারিক শিক্ষা না দিয়ে অবাধ টাকা ও নিয়ন্ত্রণহীন আচরণের সুযোগ
দিয়ে অপরাধীর মানসিকতা গড়তে দিয়ে পরিণত বয়সে শুধু আইনের দায়বদ্ধতাকে দোষী
করলে সাফাত ঐশীদের মতো অপরাধীর জন্ম হবে প্রতিনিয়ত। লেখক :শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
|