জাতি স্বপ্ন দেখবে কীভাবে?
মু. মিজানুর রহমান মিজান লিখেছেন ইত্তেফাকে
|
![]() খুব কষ্ট লাগে শিক্ষকদের বিপক্ষে কথা বলতে, তাদের বিরুদ্ধে অসাধুতার বাণী একদমই শুনতে ভালো লাগে না, জাতির কারিগরদের নামে বাজে কথা শুনলে কানের ভেতর মনে হয় কেউ তির মারছে। অসহ্য ব্যথা অনুভূত হয় বুকের ভেতর। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি, শিক্ষকদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কখনো তাদের অবাধ্য হওয়ার চেষ্টাও করিনি, জানি তাঁরা যা বলবেন তা কেবলই আমি ও আমাদের ভালোর জন্যই বলেন। তবু কিছু ভুল মাঝে মাঝে করেই ফেলি, তাঁরাও আমাদের রাগের সঙ্গে দু’-একটা কথা বলে আবার মাথায় হাত বুলিয়ে বুঝিয়ে দেন— কী করা উচিত আর কী কী বিষয় থেকে দূরে থাকা একান্তই দরকার। একজন আদর্শ শিক্ষকের কাজ শুধু পাঠদান ও পাঠগ্রহণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, আমাদের সহজ ভাবনার থেকেও অনেক বেশি দায়িত্ব তাঁর। সততা, নীতি, মূল্যবোধ, ব্যক্তিত্ব, আচরণ, ভ্রাতৃত্ববোধ, সামাজিকতার মতো মূল বিষয়গুলো ছাড়াও আমরা নানামুখী শিক্ষা পেয়ে থাকি এই শিক্ষকদের কাছ থেকেই। অনেক ক্ষেত্রে পছন্দের শিক্ষকের দৃশ্যমান দিকগুলো অনুসরণ করারও চেষ্টা করি। ভয়ে আছি, দুঃখও হচ্ছে এই ভেবে যে—শিক্ষার্থীরা তাদের গুরুকে অনুসরণ করতেই চাইবে, ব্যাপারটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু ভয়ের কারণ হলো, বর্তমান সময়ের কিছু শিক্ষকের কুশিক্ষকসুলভ মনোভাব। এই অশুভ মহলটির হাতে ভবিষ্যত্ প্রজন্ম নিরাপদ নয়। ছাত্রীদের দিকে কুনজরে তাকানো, শিক্ষার্থীদের কুরুচিকর বাক্য শোনানো, পরীক্ষাকক্ষে প্রশ্নোত্তর সরবরাহ, টাকার বিনিময়ে প্রশ্নফাঁস ও উত্তর সরবরাহ ইত্যাদি শিক্ষকতার কোন নীতির পর্যায়ে পড়ে? এসব কি উদ্বেগজনক নয়? আমাদের মনের ব্যাপারটা এমন হয়ে গেছে যে, কারণে-অকারণে সরকারকে দূষতে পারি, নিজেদের ভুলকে কখনো আরশিতে দেখতে রাজি নই। ঠিক একই মানসিকতার জানান দিচ্ছি এই গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রেও। বলছি— এটিও সরকারি ইশারা। আমরা এটা মানতে পারি না। একটি সুস্থ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য জনসমর্থনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবার সত্ সহযোগিতার প্রয়োজন অনস্বীকার্য। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের খাওয়া-না খাওয়ার খবর নেন, পোশাক-আশাকের মর্যাদা শিক্ষা দেন, বাড়িতে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে শিক্ষক রাখেন, সেরা কোচিং সেন্টারে পড়তে দেন, দামি ট্যাব-নোটবুক-স্মার্টফোন কিনে দেন কিন্তু গুরুত্ব দিয়ে সন্তানের পড়াশোনার আগ্রহ-অগ্রগতির ব্যাপারে জানতে চাওয়ার প্রবণতা দেখা যায় না। কেবল পরীক্ষা এলেই তারা চান একটা ভালো ফলাফল সে যেমন করেই হোক! জাতি আজ দুঃখের গল্প লিখতে বসেছে। গল্পটা এমন হবে তা আগেও ছিল চিন্তার বাইরে। যে জাতিকে শিক্ষার আলো থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে সে জাতি স্বপ্ন দেখবে কিভাবে? শিক্ষক সম্প্রদায়ের কাছে হাত জোড় করে বলছি, ‘দয়া করে জাতির দুঃখের গল্পটি আর বড় হতে দেবেন না।’ শ্রদ্ধা ও সম্মান আদর্শ শিক্ষকদের প্রতি। লেখক :শিক্ষার্থী, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ঢাকা ই-মেইল :[email protected] |